আস-সালামু আলাইকুম। অনেকদিন মাযহাব নিয়ে বিভ্রান্তি/ সংশয়ে থাকার পর আমি এটা নিয়ে কিতাব কিনে, অনলাইনে, অফলাইনে জ্ঞান অর্জন করি। তারপর ফেসবুকে, কিছু মুফতি, মাওলানা, আলেম, সাধারণ মানুষ, ইত্যাদি বাস্তবে একজন সাধারণ মানুষ কে বলি আমি এতদিনে যা বুঝলাম ওগুলো ঠিক আছে কিনা দেখেন একজন মুফতি ছাড়া সবাই বললো ঠিক আছে পরে যে মুফতি বললো ঠিক নেই ওনাকে বললাম Ifatwa এর মুফতি কারেকশন করে দিছেন উনি কারেকশন না দেখেই মনেহয় বললেন কারেকশন করে দিলে ঠিক আছে, এবং এক ভাই বললো অনলাইনের কিছু জিনিস ভুল তারপর বলে মাযহাব নিয়ে যা জানলান ওটা ভুল নেই এরজন্য ও কনফিউশিনে আছি। আমি যা বুঝলাম তার প্রশ্ন এবং উত্তর সহ এখানে জানাচ্ছি ভুল থাকলে সঠিকটা বুঝিয়ে দিয়েন। আল্লাহর রজ্জু শক্ত করে ধরো আর বিছিন্ন হয়োনা। (সূরা আল ইমরান ১০৩) জাকির নাইক স্যার বলেছিলেন আল্লাহর রজ্জু হলো পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদিস। যারা দ্বীন সম্পর্কে বিভিন্ন মত সৃষ্টি করে হে রাসূল তাদের দায়িত্ব তোমার নয়। (সূরা আল আনাম ১৫৯) প্রশ্নঃ ১) এখানে বলেছে আল্লাহর রজ্জু মানে কুরআন আর সহিহ হাদিস মানতে আর ৪ মাযহাব কুরআন ও সহিহ হাদীস সহ যেই হাদিস সহীহ না ওগুলো মানে কেন? যেটা এখানে মানতে বলেনি? উত্তরঃ সহীহ ছাড়া অন্যান্য বিশুদ্ধ হাদিস ইসলামে গ্রহণযোগ্য। প্রশ্নঃ ২) মাযহাব মানি ও তো মত এখানে তো আল্লাহ বলেছে মত সৃষ্টি না করতে? উত্তরঃ এই আয়াতে ইসলামের বাইরে মত সৃষ্টি করতে আল্লাহ নিষেধ করেছে। বনী ইসরাঈল ৭২ ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে। আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হবে। তাদের সকলেই জাহান্নামী, একটি দল ছাড়া। তারা কারা? যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান রাখবে এবং তাদেরকে যা আদেশ দেওয়া হয়েছে তা পালন করবে।" [সহীহ তিরমিযী, হাদিস নংঃ 2641] প্রশ্নঃ ৩) এই হাদিসে মাযহাব এর কথা না বলে কিসের কথা বলেছে বুঝিয়ে বলেন? উত্তর: হাদিসে সরাসরি "মাযহাব" শব্দ নেই, তবে এর ব্যাখ্যায় উলামাগণ বলেন, নাজাতপ্রাপ্ত দল হলো "আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত", যারা কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবীদের মত ও পথ অনুসরণ করে। চার মাযহাবের প্রতিটি ইমাম সাহাবিদের অনুসারী এবং কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতেই তাঁদের ফিকহ গঠন করেছেন। তাই চার মাযহাবের অনুসরণ নাজাতপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত। আর জান্নাতি দল হলো আহলে সুন্নত ওয়াল জামা আত। যারা নিজদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। প্রত্যেক দলই নিজদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত। (সুরা রুম, আয়াত ৩২) প্রশ্নঃ ৪) মাযহাব ও তো দলে দলে বিভক্ত হওয়া এই আয়াতে এটা কি নিষিদ্ধ নয়?/ মাযহাব অনুসরণ করা কি দলবাজি ও বিভক্তির অন্তর্ভুক্ত? উত্তর: না, মাযহাব অনুসরণ করা বিভক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। বিভক্তি তখন হয়, যখন মানুষ দলগতভাবে সত্যের বিরোধিতা করে। কিন্তু চার মাযহাব একে অপরের বিরোধিতা করে না; বরং কুরআন ও সুন্নাহর আলোকেই মতামত প্রদান করে। আয়াতটি তাদের সম্পর্কে যারা মূল দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন নতুন আকিদা তৈরি করেছে (যেমনঃ খারেজি, শিয়া, কাদিয়ানী ইত্যাদি)। প্রশ্নঃ ৫) নিচের হাদিস গুলো বুঝিয়ে দিন? রাসুলুল্লাহ সা: থেকে ৩ টি বক্তব্য এসেছে: ১) যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের পরিচয় সম্পর্কে রাসূল সা: বলেন, কেবলমাত্র ১ টি দল ( যারা জান্নাতি), সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল তারা কারা? ( যারা জান্নাতি) উত্তরে তিনি বললেন যার উপরে আমি এবং আমার সাহাবীগণ আছি। [ আত তিরমিযী ২৬৪১ ] অন্যত্র রাসূল সা বলেন আজজের দিনে আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি (হাকেম ১/১২৯)। অর্থাৎ এখানে রাসূল সা কেবল তরীকা ও বৈশিষ্টের কথা বলেছেন, কোনো দলের নাম বলে যাননি। ২) সেটি হলো আল- জামা আত। [ ইবনু মাজাহ হ/ ৩৯৯২; আহমদ, আবু দাঊদ হা/৪৫৯৭; মিশকাত হা/১৭২।] যার অর্থ ছাহাবীগণের জামা আত। তারা হল [ আল জামা আত] একটি দল উত্তরঃ এখানে আহলে সুন্নত ওয়াল জানা আত জান্নাতি বুঝিয়েছে। ৬) কোন দল জান্নাতে যাবে? উত্তরঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামা আত। প্রশ্ন ৭: যেকোনো মাযহাব কুরআন, হাদিস, সাহাবীদের দলিল মানলে কি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত হবে? উত্তর: হ্যাঁ, যদি একটি মাযহাব কুরআন, হাদিস, সাহাবা, তাবেয়ীদের দলিল অনুসারে চলে, তবে সেটি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রশ্ন ৮: চার মাযহাব কি শুধু নবীজি ﷺ ও সাহাবিদের মত অনুসরণ করে? অন্য কিছু অনুসরণ করে কি? উত্তর: চার মাযহাব কেবল কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবিদের আমল ও তাবেয়ীদের ব্যাখ্যা অনুসরণ করে। এর বাইরে কিছু অনুসরণ করে না। তবে, ইজতিহাদী বিষয়ে কিয়াস, ইজমা, উরফ (প্রচলিত প্রথা) ইত্যাদি গ্রহণ করা হয়, যা কুরআন-সুন্নাহর অনুমোদিত নীতির অংশ। প্রশ্ন ৯: মাযহাব কেন মানবো? দলিলসহ বুঝিয়ে দিন? উত্তর: ১. কুরআনের নির্দেশ: ﴿فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ﴾ (সূরা নাহল ১৬:৪৩) অর্থাৎ, আলেমদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ২. সাহাবাদের পদ্ধতি: সাহাবারা নবীজি ﷺ এর যুগে সরাসরি প্রশ্ন করতেন, কিন্তু পরবর্তী যুগে ইজতিহাদ ছাড়া দ্বীন বোঝা কঠিন হয়ে যায়। ৩. ইমামগণ বিশেষজ্ঞ: চার ইমামই কুরআন, হাদিস, সাহাবা ও তাবেয়ীদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে ফিকহ গঠন করেছেন। প্রশ্ন ১০: হানাফি মাযহাবের ৫ ভাগে বিভক্তি কি নিষিদ্ধ? উত্তর: না, কারণ এটি মূলনীতি ও আকিদার মধ্যে বিভক্তি নয়; বরং ইজতিহাদী বিষয়ে বিভিন্ন মতপার্থক্য। যদি বিভক্তি সত্যের বিরোধিতা করে করা হয়, তবে তা নিষিদ্ধ। কিন্তু, যদি মতপার্থক্য কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যার জন্য হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। প্রশ্ন ১১ঃ নবীজী বলেছে ৭২ দলের একদল হবে জান্নাতী। ওই ১ টা কী দল নয়? উত্তরঃ হ্যাঁ,আংশিক বিবেচনায় দল। সার্বিক বিবেচনায় দল নয়। যারা কুরআন ও হাদিস মেনে চলবে তারাই জান্নাতে যাবে। যে মাযহাব থেকেই হোক! মাযহাবগুলো হলো কোর'আন ও হাদিসের সারনির্যাস, যা মুজতাহিদ ইমামগন আমাদের জন্য কুরআন ও হাদিস মানা সহজ করে দিয়েছেন। জান্নাতি দল তারাই যারা কোর'আন ও হাদিস অনুযায়ী আমল করবে। চার'ও মাযহাব কোর'আন ও হাদিসের উপর'ই আমল করেন। আমরা যারা কোর'আন ও হাদিস থেকে সরাসরি আহকাম বের করতে সক্ষম নই,তাদের জন্য মাযহাব। যিনি স্বয়ং মুজতাহিদ,তার জন্য মাযহাব জরুরি নয়। প্রায় একই প্রশ্ন Ifatwa.info সাইটে করায় ওনারা কারেকশন করে দিছেন। ওইযে Ifatwa.info সাইটের কারেকশন লিংকঃ https://ifatwa.info/117300 কারেকশন টাও দেখবেন। সবকিছু সঠিক কিনা জানান ভুল থাকলে সঠিকটা বুঝিয়ে দিন। শুকরিয়া।